বিকাশ লোন এখন ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত পাবেন!
বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘বিকাশ’ তার গ্রাহকদের জন্য এক অনন্য সুবিধা নিয়ে এসেছে, যা দেশের ডিজিটাল আর্থিক ব্যবস্থাকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেছে। বর্তমানে, বাংলাদেশের যেকোনো প্রান্তে কোটি কোটি মানুষ দৈনন্দিন আর্থিক লেনদেনের জন্য বিকাশকে ব্যবহার করছেন। সেই ধারাবাহিকতায়, বিকাশ সম্প্রতি তাদের লোন সেবার সর্বোচ্চ সীমা বাড়িয়ে দিয়েছে। যেখানে আগে গ্রাহকরা সর্বোচ্চ ২০,০০০ টাকা পর্যন্ত লোন পেতেন, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০,০০০ টাকায়।
এই লোন সুবিধাটি সিটি ব্যাংকের সহযোগিতায় সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে এটি একটি সরকারি ও বাণিজ্যিক ব্যাংকের দিক থেকে সমর্থিত সেবা হিসেবে অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্যতা পেয়েছে। পুরো লোন প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ ডিজিটাল, দ্রুত এবং কাগজপত্রবিহীন হওয়ায় ব্যবহারকারীদের জন্য এটি অত্যন্ত সহজ এবং ঝামেলামুক্ত একটি সেবা। আর্থিক জরুরী প্রয়োজনে এখন ব্যাংক অফিসের দীর্ঘ লাইন কিংবা জটিল কাগজপত্র জমা দেওয়ার চিন্তা ছাড়াই বিকাশ অ্যাপ থেকে কয়েক ক্লিকেই লোন পাওয়া যাচ্ছে।
এই সুবিধাটি বিশেষ করে যারা প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাইরে রয়েছেন কিংবা যাদের ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া কঠিন, তাদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ। দেশের দূর্গম এলাকায় কিংবা নগরীর সাধারণ মানুষ যাদের আর্থিক অবস্থা তেমন নেই, তারা এখন সহজে আর্থিক সাহায্য নিতে পারছেন। বিকাশের এই লোন সেবা ছোট ব্যবসায়ী, ছাত্রছাত্রী, গৃহিণী বা চাকরিজীবী যেকোনো মানুষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী হয়ে দাঁড়িয়েছে, যারা কোনো জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত অর্থের প্রয়োজন অনুভব করেন।
আরও পড়ুনঃ ইউটিউবের মাধ্যমে আয় করে কীভাবে
তাছাড়া, ডিজিটাল আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকে এগিয়ে নিতে বিকাশের এই উদ্যোগ দেশজুড়ে আর্থিক সেবার সহজলভ্যতাকে বৃদ্ধি করছে, যা দেশের অর্থনীতির গতিশীলতাকে ত্বরান্বিত করছে। ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল লেনদেন ও আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বাংলাদেশ এখন আর্থিক পরিকাঠামোর ক্ষেত্রে অনেক উন্নতিতে যাচ্ছে। বিকাশের এই লোন সেবা সেই উন্নয়নেরই একটি জ্বলন্ত উদাহরণ।
সুতরাং, বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে সহজ, দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য লোন পাওয়ার সুযোগ দেশের মানুষের জন্য এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে, যা তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে এবং আর্থিক সংকটে সময় মতো সহায়তা করতে সক্ষম।
আগের সীমা ছিল ২০ হাজার, এখন সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা
বিকাশ ও সিটি ব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে চালু হওয়া লোন সেবা শুরুতে সীমিত আকারে দেওয়া হতো। প্রথম দিকে গ্রাহকরা মাত্র ৫০০ টাকা থেকে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত লোন নিতে পারতেন। পরে লোনের সর্বোচ্চ সীমা বাড়িয়ে ২০,০০০ টাকা করা হয়। ক্রমাগত চাহিদা বাড়তে থাকায় এবং গ্রাহকদের আরও সুবিধা দিতে এখন এই সীমা ৫০,০০০ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে।
লোনের ন্যূনতম পরিমাণ ৫০০ টাকা থেকে শুরু হয়, এবং একজন গ্রাহক একাধিকবার লোন নিতে পারেন, তবে সর্বমোট ৫০,০০০ টাকার সীমা অতিক্রম করা যাবে না। অল্প সময়ের জরুরি আর্থিক প্রয়োজন মেটাতে এই লোন সেবা অনেকেই কার্যকর সমাধান হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।
কেন বিকাশ লোন এত জনপ্রিয়
বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে ডিজিটাল লোন নেওয়ার প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত সহজ, স্বচ্ছ এবং ঝামেলামুক্ত হওয়ায় এটি দেশের যেকোনো নাগরিকের জন্য কার্যকর একটি আর্থিক সেবা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এখন আর ব্যাংক শাখায় গিয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হবে না, কিংবা জটিল কাগজপত্র সম্পূর্ণ করার চিন্তা করতে হবে না। বিকাশ অ্যাপ থেকেই আপনি কয়েক ক্লিকের মাধ্যমে লোনের জন্য আবেদন করতে পারবেন এবং একবার আবেদন অনুমোদিত হলে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে লোনের টাকা আপনার বিকাশ একাউন্টে জমা হয়ে যাবে।
এই ডিজিটাল লোন সুবিধার মেয়াদ সম্পর্কে বলা যায়, বিকাশ গ্রাহকরা দুই ধরনের মেয়াদে লোন নিতে পারবেন—১ মাস অথবা ৩ মাস। আবেদন করার সময় আপনি নিজের সুবিধা ও আর্থিক পরিস্থিতি অনুযায়ী মেয়াদ নির্বাচন করতে পারবেন। এর ফলে যাদের অল্প মেয়াদে ঋণের প্রয়োজন, তারা ১ মাসের লোন নিতে পারবে, আবার যারা একটু বেশি সময়ে কিস্তি পরিশোধ করতে চান, তারা ৩ মাসের লোন নিতে পারবেন।
আরও পড়ুনঃ গুগল পে চালু হলো বাংলাদেশে
কিস্তি পরিশোধের প্রক্রিয়াও অত্যন্ত সহজ এবং স্বয়ংক্রিয়। নির্ধারিত তারিখে আপনার বিকাশ একাউন্টে যদি পর্যাপ্ত টাকা থাকে, তাহলে ওই তারিখে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কিস্তির টাকা কেটে নেওয়া হবে। এই স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে গ্রাহকদের জন্য সুবিধা থাকে যেন তারা সময়মতো লোন পরিশোধ করতে পারেন এবং অতিরিক্ত জরিমানা বা বিলম্ব ফি এড়াতে পারেন। তাছাড়া, গ্রাহক ইচ্ছা করলে নির্ধারিত মেয়াদের আগেই পুরো লোন পরিশোধ করতে পারেন, যা সুদের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে এবং অর্থ সাশ্রয়ে ভূমিকা রাখে।
এই লোন সেবার প্রসেসিং ফি খুবই কম রাখা হয়েছে, যা মাত্র ০.৫৭৫ শতাংশ (০.৫ শতাংশ মূল ফি এবং এর ওপর ভ্যাট) মাত্র। এটি অন্যান্য প্রচলিত ঋণ পরিষেবার তুলনায় অনেক কম এবং গ্রাহকদের উপর আর্থিক বোঝা কমায়। তবে সুদের হার গ্রাহকের যোগ্যতা, লোনের পরিমাণ ও ব্যাংকের ক্রেডিট পলিসি অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। সুতরাং, প্রত্যেক গ্রাহকের জন্য সুদের হার একই রকম নাও হতে পারে, যা ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী নির্ধারিত হয়।
সর্বোপরি, বিকাশের এই ডিজিটাল লোন সেবা বাংলাদেশের আর্থিক ব্যবস্থায় একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন এনে দিয়েছে। এটি বিশেষ করে ছোট ব্যবসায়ী, ছাত্রছাত্রী, চাকরিজীবী এবং যারা ব্যাংকিং পরিষেবার বাইরে রয়েছেন, তাদের জন্য দ্রুত ও সহজ আর্থিক সমাধান হিসেবে কাজ করছে। ডিজিটাল প্রযুক্তির এই ব্যবহার দেশের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
বিকাশ লোন কীভাবে পরিশোধ করবেন
বিকাশ থেকে লোন নেওয়ার পর, বিকাশ অ্যাপেই সহজে দেখতে পারবেন কিস্তির পরিমাণ ও পরিশোধের নির্দিষ্ট তারিখ। নির্ধারিত তারিখে আপনার বিকাশ একাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা থাকলে, সেখান থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কিস্তির টাকা কেটে নেওয়া হবে।
আপনি চাইলে নির্ধারিত সময়ের আগেই পুরো লোন পরিশোধ করতে পারেন, এতে সুদের খরচ কমে যাবে। তবে নির্ধারিত তারিখে একাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা না থাকলে বা আগেভাগে লোন পরিশোধ না করলে বিলম্ব ফি প্রযোজ্য হবে। এই বিলম্ব ফি বাৎসরিক ১.৫ শতাংশ হারে ধার্য করা হবে।
কারা বিকাশ লোন নিতে পারবেন
সব বিকাশ গ্রাহক এই লোন সুবিধা পাবেন না। শুধুমাত্র সিটি ব্যাংকের নির্ধারিত যোগ্যতার ভিত্তিতে নির্বাচিত কিছু গ্রাহকই এই সুবিধা নিতে পারবেন। আপনি যোগ্য কিনা, তা জানতে বিকাশ অ্যাপে “Loan” অপশনটি খুলে দেখতে পারেন।
আরও পড়ুনঃ বিশ্বের শীর্ষ ১০ প্রোগ্রামিং ভাষা
সিটি ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী লোনের সুদের হার, লিমিট, প্রসেসিং ফি এবং যোগ্যতার শর্ত নির্ধারণ করে। আপনার বিকাশ অ্যাকাউন্টের লেনদেনের ইতিহাস, বিকাশ ব্যবহারের ধরণ ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করেই লোনের অনুমোদন দেওয়া হয়।
কেন এই পরিবর্তন গুরুত্বপূর্ণ
বাংলাদেশের মতো দেশে, যেখানে এখনো অনেক মানুষ ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাইরে, সেখানে এমন সহজে পাওয়া ডিজিটাল লোন এক বড় পরিবর্তন আনছে। বিকাশ ইতিমধ্যেই কোটি কোটি মানুষের আর্থিক লেনদেনের বিশ্বস্ত মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। আর এখন এই লোন সুবিধা আরও বিস্তৃতভাবে চালু হওয়ায় ছোট ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী বা চাকরিজীবীদের জন্য জরুরি সময়ে দ্রুত আর্থিক সহায়তা পাওয়া সহজ হচ্ছে।
কয়েকটি ক্লিকেই মোবাইল অ্যাপ থেকে লোন নেওয়া এবং কিস্তিতে তা পরিশোধের সুযোগ—এটাই এই সেবার সবচেয়ে বড় সুবিধা, যা গ্রাহকদের জন্য ব্যাংকিং ঝামেলা ছাড়াই দ্রুত সমাধান নিশ্চিত করছে।
বিকাশ লোনের জন্য কীভাবে আবেদন করবেন
বিকাশ অ্যাপ ব্যবহার করে খুব সহজেই লোনের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এজন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন:
১. প্রথমে আপনার বিকাশ অ্যাপে লগইন করুন এবং মেনু থেকে “Loan” অপশনটি সিলেক্ট করুন।
এই কয়েকটি সহজ ধাপেই কোনো ঝামেলা ছাড়াই বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে লোন পেতে পারেন।