স্মার্টফোনের স্টোরেজ বাড়ানোর সহজ ৬টি উপায়
আপনার ফোনে পর্যাপ্ত খালি স্টোরেজ থাকলে ফোন ব্যবহার অনেক স্মুথ বা মসৃণ হয়ে যায়। কিন্তু যদি স্টোরেজ পুরোপুরি ভরে যায়, তাহলে ফোন ধীর হয়ে যায় এবং ব্যবহার করতে বিরক্তিকর লাগে। তাই স্মার্টফোনের স্টোরেজ ফাঁকা রাখার কিছু সহজ ও কার্যকর উপায় জেনে নেওয়া এখনই দরকার।
স্মার্টফোনের স্টোরেজ বাড়ানোর সহজ উপায়
স্মার্টফোনে আমরা নানা ধরনের ফাইল ও অ্যাপ সংরক্ষণ করি, যার ফলে অনেক সময় স্টোরেজ দ্রুত ভরে যায়। স্টোরেজ ফুল হয়ে গেলে ফোন ধীর গতিতে চলতে শুরু করে এবং ব্যবহারে সমস্যা দেখা দেয়। বেশির ভাগ সময় ভিডিও, ছবি, ডকুমেন্ট বা বিভিন্ন অ্যাপের কারণে ফোনের জায়গা কমে আসে। তাই স্টোরেজ খালি রাখা খুব জরুরি। এখন দেখে নেওয়া যাক কিভাবে সহজেই ফোনের স্টোরেজ খালি করা যায়:
২. কম জায়গা দখল করা লাইট অ্যাপ ব্যবহার করুন
৩. অব্যবহৃত ফাইল মুছে ফেলুন
৪. ক্যাশ মেমরি পরিষ্কার করুন
৫. বড় ফাইলগুলো কম্পিউটারে সংরক্ষণ করুন
৬. অটো ডাউনলোড বন্ধ করুন
স্মার্টফোনের কাজ করার ক্ষমতা ভালো রাখার উপায়
আপনি এখন জানলেন স্মার্টফোনের স্টোরেজ বাড়ানোর সহজ কিছু উপায়। স্মার্টফোন আজকের দিনে আমাদের জীবনের অপরিহার্য অংশ। আপনার ফোন যাই হোক না কেন, যদি ঠিকমতো পরিচর্যা না করেন, তাহলে ধীরে ধীরে তা ধীরগতি ও কার্যক্ষমতা হারাতে শুরু করবে। তাই যদি আপনার ফোনকে দ্রুত ও কার্যকর রাখতে চান, নিয়মিত পরিচর্যার প্রয়োজন পড়ে।
ফোনের স্টোরেজ হলো তার গতিশীলতা ও ক্ষমতার মূল চাবিকাঠি। স্টোরেজ খালি রাখা খুবই জরুরি। ফোনে যদি অপ্রয়োজনীয় ফাইল বা ব্যবহৃত না হওয়া অ্যাপ থাকে, সেগুলো ডিলিট করে ফেলুন। এতে স্টোরেজ মুক্ত হবে আর ফোন আরও দ্রুত কাজ করবে। দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করার পর ফোন যদি ধীরগতির হয়ে যায়, তখন ফ্যাক্টরি রিসেট দেওয়াও প্রয়োজন হতে পারে।
ফোনের অ্যাপগুলো নিয়মিত আপডেট রাখুন। এতে অ্যাপগুলো শুধু নিরাপদই থাকবে না, তাদের পারফরম্যান্সও বাড়বে। নতুন আপডেটে অনেক সময় নিরাপত্তার পাশাপাশি কর্মক্ষমতাও উন্নত হয়, তাই সর্বশেষ আপডেট ব্যবহার করা ভালো।
আপনার ফোনকে দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করতে স্ক্রিন প্রটেক্টর এবং মজবুত কভার ব্যবহার করুন। অনেক সময় ফোন হাত থেকে পড়ে গেলে বা পানিতে ভিজে গেলে অভ্যন্তরীণ হার্ডওয়্যার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা পরবর্তীতে সমস্যা তৈরি করে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো চার্জিং পোর্ট ও স্পিকার পরিষ্কার রাখা। অনেক সময় এখানে ধুলো জমে যাওয়ার কারণে চার্জ দিতে সমস্যা হয় বা স্পিকারের আওয়াজ কমে যায়। পরিষ্কার করার সময় নরম ও মোলায়েম কোনো উপকরণ ব্যবহার করুন, যাতে ক্ষতি না হয়। ধারালো কিছু ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
আপনার ফোন ভালো রাখতে এই সাধারণ কয়েকটি নিয়ম মেনে চললেই ফোনের গতি ও কর্মক্ষমতা অনেক বেশি ভালো থাকবে।
স্মার্টফোনের ব্যাটারি ভালো রাখার উপায়
স্মার্টফোনের ব্যাটারি যদি একবার ডাউন হয়ে যায়, তাহলে ফোন পুরোপুরি অচল হয়ে পড়ে এবং ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। তাই ব্যাটারিকে ভালো রাখতে কিছু সহজ নিয়ম মেনে চলা খুব জরুরি। নতুন ফোন কেনার পর তা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবহার না করে, প্রথমে কিছুক্ষণ চার্জে রাখার পরই চালু করুন। ফোন যখন ইচ্ছেমতো চার্জে লাগাবেন না, বরং নির্দিষ্ট সময় মেনে চার্জ করা ভালো।
যেসব অ্যাপ ব্যাকগ্রাউন্ডে চলে, সেগুলো বন্ধ করে রাখুন কারণ ফোন অফ থাকা সত্ত্বেও এগুলো ব্যাটারির শক্তি খরচ করতে পারে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, ফোন চার্জিং চলাকালীন সময়ে ফোন ব্যবহার করবেন না। এতে ব্যাটারির উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে যা ব্যাটারির আয়ু কমিয়ে দেয়।
অনেকেই দ্রুত চার্জ হওয়ার জন্য ফাস্ট চার্জার ব্যবহার করেন, কিন্তু তা ব্যাটারির ক্ষতি করতে পারে, তাই ফাস্ট চার্জিং থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকুন। এছাড়া সবসময় নিজের ফোনের সাথে আসা চার্জার ব্যবহার করুন, অন্য ফোনের চার্জার দিয়ে চার্জ দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। এই নিয়মগুলো মেনে চললে আপনার ব্যাটারি অনেক দীর্ঘদিন ভালো থাকবে।
স্মার্টফোনে চার্জ ধরে রাখার উপায়
আপনি স্মার্টফোনের স্টোরেজ বাড়ানোর সহজ উপায় সম্পর্কে জানেন। এবার যদি চান আপনার ফোনের চার্জ বেশি দিন ধরে টিকে থাকুক, তাহলে কিছু সহজ নিয়ম মেনে চলতে হবে। অনেকেই ফোনের চার্জ দ্রুত শেষ হয়ে যাওয়ায় সমস্যায় পড়েন, তাদের জন্য এই টিপসগুলো খুবই উপকারী। এই পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করলে আপনি আপনার ফোনের চার্জ অনেক বেশি সাশ্রয় করতে পারবেন।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ যা চার্জ বাঁচাতে সাহায্য করবে:
- ব্যাকগ্রাউন্ডে চলমান অ্যাপগুলো বন্ধ করে রাখুন।
- ব্যবহার না করলে ওয়াইফাই ও ব্লুটুথ বন্ধ করে দিন।
- লোকেশন সার্ভিস (GPS) অফ রাখুন।
- পুরনো বা খারাপ চার্জার ব্যবহার করবেন না।
- ফোনের স্ক্রিনের ব্রাইটনেস কমিয়ে রাখুন।
- বেশি গরম বা ঠাণ্ডা জায়গায় ফোন রাখা থেকে বিরত থাকুন।
- প্রয়োজনে এরোপ্লেন মোড ব্যবহার করুন।
- পাওয়ার সেভিং মোড চালু করে রাখুন।
- হালকা বা সাদা ওয়ালপেপারের পরিবর্তে ডার্ক বা কালো ওয়ালপেপার ব্যবহার করুন।
- ভাইব্রেশন-এর পরিবর্তে রিংটোন সাউন্ড দিন।
- অটো আপডেট ফিচার বন্ধ করে রাখুন।
- ডেটা সেভিং মোড ব্যবহার করুন।
- পুরনো ভার্সনের অ্যাপ ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন, সবসময় আপডেটেড ভার্সন ব্যবহার করুন।
- ব্যাটারি অপ্টিমাইজেশন সেটিংস সক্রিয় রাখুন।
- ওয়্যারলেস চার্জিং প্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকুন।
এই ছোট ছোট টিপসগুলো মেনে চললে আপনার ফোনের চার্জ আরও দীর্ঘসময় ধরে চলবে এবং ফোন ব্যবহারে সুবিধা হবে।
স্মার্টফোনে ম্যালওয়্যার প্রবেশ করলে যেভাবে বুঝবেন
আপনি স্মার্টফোনের স্টোরেজ বাড়ানোর সহজ উপায় সম্পর্কে জানতে পারলেন। কিন্তু অনেক সময় আমাদের অজান্তে ফোনে ম্যালওয়্যার ঢুকে যেতে পারে। হ্যাকাররা এই ম্যালওয়্যার ব্যবহার করে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করার চেষ্টা করে এবং ফোনের ওপর নজর রাখে। তাই জানা জরুরি, কিভাবে বুঝবেন আপনার ফোনে ম্যালওয়্যার প্রবেশ করেছে কি না।
ম্যালওয়্যারের কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:
- ফোন ধীরে চলা বা গতি কমে যাওয়া।
- বারবার কল ড্রপ হওয়া কিংবা নেটওয়ার্ক সমস্যায় পড়া।
- অজানা বা অনিচ্ছাকৃত তথ্য ব্যবহারের অনুমতি চাওয়া।
- মোবাইল ডেটার অস্বাভাবিক বা অতিরিক্ত ব্যবহার।
- ফোন অতিরিক্ত গরম হওয়া এবং চার্জ দ্রুত শেষ হয়ে যাওয়া।
স্মার্টফোনে ম্যালওয়্যার থেকে বাঁচার উপায়
ফোনে নানা কারণে, অনেক সময় অজান্তে ম্যালওয়্যার প্রবেশ করতে পারে। এসব ম্যালওয়্যার আমাদের ব্যক্তিগত তথ্যকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়। তাই কীভাবে ম্যালওয়্যার থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখা যায়, তা জানা খুবই জরুরি। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস দেওয়া হলো:
- ভালো মানের অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করুন।
- টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন (Two-Factor Authentication) সক্রিয় রাখুন।
- অ্যাপ ডাউনলোড করার সময় সতর্ক থাকুন, শুধুমাত্র বিশ্বস্ত সোর্স থেকে অ্যাপ ইনস্টল করুন।
- পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করলে ভিপিএন (VPN) ব্যবহার করুন।
- ফোনের সফটওয়্যার ও অ্যাপগুলো নিয়মিত আপডেট করুন।
- শক্তিশালী ও জটিল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন এবং নিয়মিত পরিবর্তন করুন।
এই সহজ নিয়মগুলো মেনে চললে আপনি আপনার ফোন ও তথ্যকে ম্যালওয়্যার থেকে অনেকটা নিরাপদ রাখতে পারবেন।
স্মার্টফোনে ভাইরাস প্রবেশ করলে যেভাবে ডিলিট করবেন
অনেকের ফোন ভাইরাসে আক্রান্ত হয়, যার কারণে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হারিয়ে যাওয়ার বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
তাই জানতে হবে ফোনে ভাইরাস ঢুকে গেলে কিভাবে সেগুলো মুছে ফেলবেন। নিচে কিছু কার্যকর পদ্ধতি দেওয়া হলো:
- গুগল প্লে স্টোর প্রটেক্ট চালু রাখুন।
- ফোনের ক্যাশ মেমরি নিয়মিত ক্লিয়ার করুন।
- ভালো মানের অ্যান্টি-ম্যালওয়্যার সফটওয়্যার ইনস্টল করুন।
- সমস্যা সমাধানে প্রয়োজন হলে ফোনকে ফ্যাক্টরি সেটিংসে রিসেট করতে পারেন।
এই ধাপগুলো অনুসরণ করলে আপনার ফোন থেকে ভাইরাস দূর করা সহজ হবে।
স্মার্টফোন কেনার সময় যে বিষয় মাথায় রাখবেন
স্মার্টফোন কেনার সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন, যাতে আপনি একটি ভালো ফোন বেছে নিতে পারেন। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক, কিভাবে স্মার্টফোন কেনার আগে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়:
- ফোনটি কোন ধরনের উপাদান দিয়ে তৈরি, তার গুণগত মান কেমন।
- ডিসপ্লের ধরন ও রেজোলিউশন।
- প্রসেসরের ক্ষমতা ও কার্যকারিতা।
- ব্যাটারির মেয়াদ এবং চার্জ ধরে রাখার ক্ষমতা।
- অপারেটিং সিস্টেম কি ধরনের এবং তার আপডেট সাপোর্ট।
- ক্যামেরার গুণগত মান ও ফিচার।
- ফোনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেমন।
- স্পিকারের সাউন্ড কোয়ালিটি।
- হেডফোন জ্যাকের উপস্থিতি ও ধরন।
- স্টোরেজের পরিমাণ এবং সম্প্রসারণের সুযোগ।
এই বিষয়গুলো ভালোভাবে বিবেচনা করলে আপনি আপনার প্রয়োজন ও বাজেট অনুযায়ী সেরা স্মার্টফোনটি বেছে নিতে পারবেন।
স্মার্টফোন মেরামত করতে দেওয়ার আগে করণীয়
যদি কখনো আপনার স্মার্টফোন মেরামতের জন্য দিতে হয়, তাহলে কিছু বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। কারণ ফোন নষ্ট হলেও এতে থাকা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকে যা নিরাপদ রাখা জরুরি। অনেক সময় ফোনের সার্ভিসিং মেয়াদ থাকে, আর যদি ফোন নিজে থেকে কোনো ত্রুটির কারণে নষ্ট হয়, তাহলে আপনি ফ্রি সার্ভিসিং করাতে পারবেন।
আরও পড়ুনঃ ইমেইল মার্কেটিং করে আয় করার সেরা ৫টি উপায়
তবে ফোন যদি আপনার দোষে বা ভুলবশত হাত থেকে পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন এই ফ্রি সার্ভিসিং পাওয়া যায় না। মেরামত করানোর আগে ফোনের চারপাশের ছবি তুলে রাখুন। এতে পরে যদি কোনো সমস্যা হয়, আপনি ক্ষতি পূরণের দাবি করতে পারবেন বা ফ্রি সার্ভিসিং পেতে সাহায্য করবে।
ফোনে যদি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকে, তাহলে তা আগে থেকে ব্যাকআপ করে রাখুন। প্রয়োজনীয় ফাইলগুলো সংরক্ষণ করে বাকি অপ্রয়োজনীয় ডাটা মুছে ফেলুন। প্রয়োজনে ডেটা ব্যাকআপ নিয়ে ফোন রিসেট করেও ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখা যায়।
ফোনের কেস, স্কিন প্রটেক্টর এবং এক্সেসরিজগুলো সাধারণত মেরামতের প্রয়োজন হয় না, তাই সেগুলো রাখতে পারেন।